লেডিস স্লিপার

লেডিস স্লিপার একটি অদ্ভুত সুন্দর অর্কিড জাতীয় ফুল, যার উৎপত্তি ইউরোপে। এটি মূলত যুক্তরাজ্যে বেশি দেখা যায়। এর বংশবৃদ্ধি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং এটি বিশেষ ধরনের ছত্রাকের সঙ্গে সহাবস্থানে বেড়ে ওঠে, যা উদ্ভিদটিকে পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া বজায় রাখে। এই ফুলের সব প্রজাতিই বেশ দুর্লভ ও ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে ধরা হয়। 'লেডিস স্লিপার' নামটির উৎপত্তি হয়েছে ফুলটির আকৃতি থেকে—যেটি দেখতে অনেকটা নারীর জুতার মতো। বর্তমানে এই ফুলটির প্রায় ৫০টির মতো প্রজাতি রয়েছে জানা গেছে, যেগুলো দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকা, এশিয়া এবং ইউরোপে ছড়িয়ে আছে। এই ফুলের প্রজাতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নামগুলো হলো কুইন্স স্লিপার, হেয়ারি স্লিপার এবং মাউন্টেন স্লিপার, যা মূলত চীনের পূর্বাঞ্চলে পাওয়া যায়।

ডাভ অর্কিড

ডাভ অর্কিডকে বিশ্বের সবচেয়ে বিরল প্রজাতির ফুলগুলোর একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। পানামায় এটিকে জাতীয় ফুল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই অর্কিড প্রজাতির ফুলটি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অঞ্চলেও পাওয়া যায়। এটি স্বাভাবিক উপায়ে বংশবিস্তার করতে পারে না, এ কারণেই এটি এতটা বিরল। এছাড়া, এই উদ্ভিদ নিজে পাতা তৈরি করে না এবং সালেকসংশ্লেষণেও অংশ নেয় না—বরং এক ধরনের বিশেষ ছত্রাকের ওপর নির্ভর করে, যেটি এর পুষ্টির একমাত্র উৎস। ডাভ অর্কিড কোনো চিহ্ন ছাড়াই বছরের পর বছর মাটির নিচে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু একবার সঠিক পরিবেশ তৈরি হলে ফুলটি হঠাৎ করেই ফুটে ওঠে এবং সবাইকে বিমোহিত করে তোলে।

রেড মিডলমিস্ট

এই ফুলকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্লভ উদ্ভিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মাত্র দুটি রেড মিডলমিস্ট গাছ আছে—যার একটি যুক্তরাজ্যে এবং অন্যটি নিউজিল্যান্ডে অবস্থিত। ১৯শ শতকের শুরুতে এটি চীন থেকে আনা হয়। একে রেড ক্যামেলিয়াও বলা হয়ে থাকে। ঝলমলে লাল পাপড়ির জন্য এই ফুল আলাদা করে সবার নজর কাড়ে। যুক্তরাজ্যে বহু বছর এই গাছ ফুল দেয়নি, তবে সাম্প্রতিক সময়ে আবার ফুল ফুটেছে। আপনি চাইলে লন্ডনের বোটানিক্যাল গার্ডেনে এই আশ্চর্য রেড মিডলমিস্ট ফুল দেখতে পারবেন।

চকলেট কসমস

ল্যাটিন আমেরিকা ও মেক্সিকোতে উৎপত্তি হওয়া এই ফুলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এটি চকলেট আর ভ্যানিলার মতো মিষ্টি সুবাসে পরিপূর্ণ। এটি দেড় মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এর ২০টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। চকলেট কসমসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো—এটি ঠান্ডা প্রতিরোধী ও বিভিন্ন ধরনের মাটিতে সহজেই বেড়ে ওঠে। একসময় এই ফুল যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ছিল, কিন্তু ২০শ শতকের শুরুতে এটি প্রায় বিলুপ্তির মুখে পড়ে। পরে বিজ্ঞানীরা মেক্সিকো থেকে কিছু বীজ সংগ্রহ করে এই দুর্লভ উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন।

সিলিন (জিব্রাল্টার ক্যাম্পিয়ন)

জিব্রাল্টার পর্বতের কোলে জন্ম নেওয়া এই ফুলকে অনেকেই প্রকৃতির এক অনন্য বিস্ময় হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে কয়েকজন পর্বতারোহীরা এটি আবিষ্কার করেন, যদিও তার আগে এই ফুলটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে মনে করা হতো। বর্তমানে সিলিন ফুল জিব্রাল্টারের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও যুক্তরাজ্যের কিছু স্থানে জন্মে। এর আকৃতি বেশ ছিমছাম, আর পাপড়ির রঙ বেশ কোমল। এটি সাধারণ মাটিতে ভালো জন্মে এবং অনেক সময় ইনফিউশনের মাধ্যমে সিডেটিভ ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। উদ্ভিদবিদরা এই ফুলের সংকরায়ন ঘটিয়ে এটিকে আরও নানা ফুলের সঙ্গে ক্রসব্রিড করে ফুলের তোড়ায় ব্যবহারের উপযোগী করে তুলেছেন।

জেড ভাইন

পৃথিবীর ছয়টি সবচেয়ে বিরল ফুলের তালিকার সর্বশেষ অবস্থানে রয়েছে এমারেল্ড রঙের অসাধারণ এক লতা—যা জেড ভাইন নামে পরিচিত এবং এটিতে সারা বছরই ফুল ফোটে। এটি হাওয়াই ও ফিলিপাইনে জন্মে থাকে এবং লেগিউম পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এই উদ্ভিদটিকে অনেকে টিফানি ফ্লাওয়ার নামেও চেনেন। এর রঙের সংমিশ্রণ এক কথায় অনন্য—এমারেল্ড, সবুজ ও নীলের মিশেলে এই ফুল প্রকৃতির জীবন্ত অলংকার হয়ে উঠেছে। জেড ভাইন ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, ফলে এটি সহজেই বেশ অনেকখানি জায়গা ঢেকে ফেলতে পারে। রাতে বাদুড়ের মাধ্যমে এর পরাগায়ন হয়, আর অন্ধকারে এই ফুল হালকা আলো ছড়ায়—যেন ফুলটি নিজেই জ্বলজ্বল করছে। এই লতা দ্রুত বেড়ে ওঠে—প্রথম ১৪ দিনেই এটি ৫ মিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। বর্তমানে জেড ভাইন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এবং এর টিকে থাকার জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই বিরল উদ্ভিদ শুধুমাত্র লন্ডনের বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিজেদের উপযোগী করে টিকতে পেরেছে—সেখানে এখনো এটি তার সৌন্দর্যে দর্শকদের অভিভূত করে চলেছে।