শুক্রবারের ট্রেডের বিশ্লেষণ
EUR/USD পেয়ারের 1H চার্ট
শুক্রবার স্বল্পমেয়াদি কারেকশন শেষে EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের মূল্য 1.1267 লেভেল থেকে আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। ট্রেন্ডলাইনের নির্দেশনা অনুযায়ী এই পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এখনো অটুট রয়েছে, আর কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ডলার আবারও অজানা গহ্বরে দরপতনের শিকার হচ্ছে। যদিও "নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই" বলা পুরোপুরি সঠিক নয়। একটি কারণ রয়েছে, যা গত চার মাস ধরে প্রাসঙ্গিক — এবং সেই কারণের নাম হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমদানিকৃত সকল পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০% পর্যন্ত বাড়ানো হবে, কারণ ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা ভেস্তে গিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প আবারও তার পছন্দের কৌশলে ফিরে গেছেন। প্রতিপক্ষ যদি তার ইচ্ছা মেনে না নেয়, তাহলে হুমকি, ব্ল্যাকমেইল এবং চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কাজ আদায় করার চেষ্টা করা হয়। আর মার্কেটের ট্রেডাররা আবারও ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে — সঙ্গে সঙ্গে মার্কেটে নতুন করে ডলার বিক্রির প্রবণতা শুরু হয়।
EUR/USD পেয়ারের 5M চার্ট
শুক্রবার ৫ মিনিটের টাইমফ্রেমে বেশ কিছু আকর্ষণীয় মুভমেন্ট দেখা গেছে। মার্কিন সেশন শুরুর আগে এই পেয়ারের মূল্য ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, এরপর ৭০ পিপস দরপতন ঘটে, এবং দিনের শেষে আবার মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে দৈনিক সর্বোচ্চ লেভেলে ফিরে যায়। পুরো দিনে 1.1354–1.1363 জোনে কেবল একটি ট্রেডিং সিগন্যাল গঠিত হয়। এটি খুব একটা নির্ভুল ছিল না, আর দরপতনের গতি এতটাই দ্রুত ছিল যে শর্ট পজিশনে এন্ট্রির সময় পাওয়াও কঠিন ছিল। টেকনিক্যাল দিক থেকে মূল্য রাতের বেলায় 1.1267–1.1292 জোন থেকেও বাউন্স করে, কিন্তু সব ট্রেডারই এই সিগন্যাল কাজে লাগাতে পারেননি।
সোমবারের ট্রেডিংয়ের কৌশল:
ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট অব্যাহত রয়েছে। মনে হচ্ছে, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সময় থেকে শুরু হওয়া বুলিশ প্রবণতা এখনো চলমান এবং তা অব্যাহত থাকবে। বর্তমান অবস্থায় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট—শুধুমাত্র এই একটি তথ্যই মার্কেটে ডলার বিক্রির জন্য যথেষ্ট। আর যখন ট্রাম্প শুল্ক আরোপের হুমকি দেন, ব্যাপক শর্ত আরোপ করেন, অথবা নতুন করে শুল্ক আরোপ বা বিদ্যমান শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেন, তখন মার্কেটের ট্রেডারদের আর কিছুই করার থাকে না।
সোমবার EUR/USD পেয়ারের মূল্য আরও বাড়তে পারে, কারণ ট্রাম্প আবারও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিচ্ছেন। তবে সাময়িকভাবে ডলার শক্তিশালী হলেও, এটি সামগ্রিকভাবে ডলারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
৫ মিনিটের চার্টে ট্রেডিংয়ের জন্য নিচের লেভেলগুলো পর্যবেক্ষণ করা উচিত: 1.0940–1.0952, 1.1011, 1.1088, 1.1132–1.1140, 1.1198, 1.1267–1.1292, 1.1354–1.1363, 1.1413–1.1424, 1.1474–1.1481, 1.1513, 1.1548, 1.1571, 1.1607–1.1622। সোমবার ইউরোজোন বা যুক্তরাষ্ট্রে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে না বা কোনো উল্লেখযোগ্য প্রতিবেদনও প্রকাশিত হবে না, ফলে মার্কেটে সাইডওয়েজ মুভমেন্ট (ফ্ল্যাট) অথবা ডলারের আরও দরপতনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। 1.1267 লেভেলের কাছাকাছি একটি রিবাউন্ড দেখা গেছে, তাই এই পেয়ারের মূল্যের আরও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রেডিং সিস্টেমের মূল নিয়মাবলী:
- সিগনালের শক্তি: যত দ্রুত একটি সিগন্যাল (রিবাউন্ড বা ব্রেকআউট) গঠিত হয়, সিগন্যালটিকে ততই শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- ভুল সিগন্যাল: যদি কোনো লেভেলের কাছে দুই বা ততোধিক ভুল ট্রেডিং সিগনাল গঠিত হয়, তাহলে ঐ লেভেল থেকে প্রাপ্ত পরবর্তী সিগন্যালগুলোকে উপেক্ষা করা উচিত।
- ফ্ল্যাট মার্কেট: যখন মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্ট দেখা যায়, তখন পেয়ারগুলোতে একাধিক ভুল সিগন্যাল গঠিত হতে পারে অথবা কোনো সিগন্যাল না-ও গঠিত হতে পারে। মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্টের ইঙ্গিত পাওয়ামাত্র ট্রেডিং বন্ধ করে দেওয়াই ভালো।
- ট্রেডিংয়ের সময়সূচী: ইউরোপীয় সেশন শুরু থেকে মার্কিন সেশনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ট্রেড ওপেন করুন এবং এরপর সকল ট্রেড ম্যানুয়ালি ক্লোজ করে ফেলুন।
- MACD সিগন্যাল: ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে কেবল সেই MACD সিগন্যালগুলোর ওপর ভিত্তি করে ট্রেড করুন, যেগুলো উচ্চ মাত্রার অস্থিরতা এবং ট্রেন্ডলাইন বা ট্রেন্ড চ্যানেলের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রবণতা হিসেবে বিবেচিত।
- নিকটতম লেভেল: যদি দুটি লেভেল খুব কাছাকাছি (৫–২০ পিপসের মধ্যে) অবস্থিত হয়, তাহলে সেগুলোকে সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স জোন হিসেবে বিবেচনা করুন।
- স্টপ লস: মূল্য কাঙ্ক্ষিত দিকের দিকে ১৫ পিপস মুভমেন্ট প্রদর্শন করলে, ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করুন। এতে করে ভুল সিগন্যালের কারণে লোকসানের ঝুঁকি কমে আসে।
চার্টের মূল উপাদান:
সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল: এই লেভেলগুলো পজিশন ওপেন বা ক্লোজ করার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং টেক প্রফিট সেট করার ক্ষেত্রেও উপযোগী।
লাল লাইনসমূহ: চ্যানেল বা ট্রেন্ডলাইন, যা বর্তমান প্রবণতা এবং ট্রেডের সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
MACD ইনডিকেটর (14,22,3): হিস্টোগ্রাম এবং সিগন্যাল লাইন বিশ্লেষণের জন্য একটি অতিরিক্ত ট্রেডিং সিগন্যালের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ও প্রতিবেদন: এই তথ্যগুলো অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে পাওয়া যায় এবং মূল্যের মুভমেন্টে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন বা মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসুন, যাতে হঠাৎ করে মূল্যের রিভার্সাল বা বিপরীতমুখী হওয়ার প্রবণতা এড়ানো যায়।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ে নতুন ট্রেডারদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি ট্রেড লাভজনক হবে না। দীর্ঘমেয়াদে ট্রেডিংয়ে সফলতা অর্জনের জন্য একটি সুস্পষ্ট কৌশল গ্রহণ এবং সঠিক মানি ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।