চীন

চীন এখনও ইরানি তেলের প্রধান — এবং কার্যত অপ্রতিস্থাপনযোগ্য — ক্রেতা। Kpler-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশটি ইরানের রপ্তানির প্রায় ৯০% পর্যন্ত, অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ১১ লক্ষ ব্যারেল তেল ক্রয় করে। এই তেলের বড় অংশই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে “মালয়েশিয়ান” তেলের ছদ্মবেশে চীনের স্বাধীন রিফাইনারিগুলোতে পাঠানো হয়, যেগুলোকে “টিপট” রিফাইনারি বলা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য ইরানি তেল কেবলমাত্র কোনো বিকল্প নয় — বরং তাদের ব্যবসার মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। নিষেধাজ্ঞা কঠোর হওয়া থেকে শুরু করে হরমুজ প্রণালীর অবরোধ — যেকোনো ব্যাঘাত এই রিফাইনারিগুলোর উৎপাদনে সরাসরি আঘাত হানবে এবং চীনের জ্বালানি সরবরাহে সংকট তৈরি করবে।

সিরিয়া

সিরিয়া প্রায় সম্পূর্ণভাবে ইরানি তেলের ওপর নির্ভরশীল: দেশটির প্রায় ৮০% তেল বেনিয়াস বন্দরে পৌঁছানো ট্যাংকারের মাধ্যমে আমদানি করা হয়। এই অপরিশোধিত তেলের মাধ্যমে দেশটির সবচেয়ে বড় রিফাইনারিকে চালানো হয় এবং জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড সচল রাখে। চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেলে, বেনিয়াস রিফাইনারি আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে বড় শহরগুলোতে ব্ল্যাকআউট দেখা দেয়। দামেস্কের হাতে কার্যকর কোনো বিকল্প পরিকল্পনা নেই — এমনকি স্বল্পমেয়াদী সরবরাহ ব্যাঘাতও তাদের জ্বালানি অবকাঠামোকে অচল করে দিতে পারে।

তুরস্ক

চার বছরের বিরতির পর, তুরস্ক আবার ইরানি তেল আমদানি শুরু করেছে। ইউরোস্ট্যাটের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে দেশটি প্রতিদিন প্রায় ৩০,০০০ ব্যারেল ইরানি তেল ক্রয় করেছে। এই তেল তুপরাস রিফাইনারিগুলোর জন্য কম মূল্যের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়, যা প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ কমাতে সাহায্য করে। যদিও আমদানির পরিমাণ এখনো সীমিত পর্যায়ে, তবুও এটি আঙ্কারার জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে — বৈশ্বিক তেলের বাজার অস্থির থাকায় এমন আংশিক নির্ভরতাও জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE)

নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখলেও, ইরানি তেলের ছায়া সরবরাহ শৃঙ্খলে সংযুক্ত আরব আমিরাত বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জেবেল আলি ও খোর ফাক্কান বন্দরে রেকর্ড পরিমাণ ট্রানজিট কার্যক্রম দেখা গেছে। ভেসেল ট্র্যাকারের তথ্যমতে, কিছু ট্যাংকার বিদেশি পতাকার ছদ্মবেশে প্রবেশ করে, কার্গো বদল করে “বৈধ” চালান হিসেবে পুনঃরপ্তানি করে। এই ধূসর পুনঃরপ্তানি প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাত বিপুল পরিমাণ ট্রানজিট ফি উপার্জন করে। তবে, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত আরও বাড়লে, এই সরবরাহ ব্যবস্থা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই থমকে যেতে পারে — যা সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজস্ব ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ নেটওয়ার্কে বড় ব্যাঘাত ঘটাবে।

মালয়েশিয়া

ইরানি তেলের সরবরাহ ব্যবস্থায় মালয়েশিয়া নিরব কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভেসেল ট্র্যাকিংয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ইরানি তেলের প্রায় ৪০% জাহাজ থেকে জাহাজে স্থানান্তরিত হয়ে মালয়েশিয়ার উপকূলে পৌঁছেছে। ট্যাংকারগুলো মালাক্কা প্রণালীতে ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে তেল স্থানান্তর, পতাকা পরিবর্তন ও পুনঃনথিভুক্ত করে। এপ্রিল মাসে, মার্কিন ট্রেজারি একটি মালয়েশিয়ান লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানকে এই রি-প্যাকেজিং কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা দেয়। নজরদারি আরও কঠোর হলে, এই গোপন সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে এবং ফলে আঞ্চলিক জ্বালানি সরবরাহ শৃঙ্খল হুমকির মুখে পড়বে।

ভেনেজুয়েলা

ভেনেজুয়েলা তাদের অতিভারী অরিনোকো তেলকে পাতলা করতে ইরানি কনডেনসেটের ওপর নির্ভর করে। এই উপাদান ছাড়া দেশটির রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি PDVSA আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিযোগ্য মিশ্রণ উৎপাদন করতে পারে না। Argus-এর তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে ইরানের সঙ্গে তেল বিনিময় কমে যাওয়ার ফলে ভেনেজুয়েলার জাতীয় উৎপাদন প্রায় ১২% কমে যায়। এখন, ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নতুন করে শুরু হলে, এই প্রবাহ আবার বন্ধ হয়ে যেতে পারে — যার ফলে ভেনেজুয়েলার ভঙ্গুর তেল খাতের পুনরুদ্ধার আরও জটিল হয়ে পড়বে।

আফগানিস্তান

আফগানিস্তান তাদের প্রায় ২৫% জ্বালানী পণ্য — যেমন ডিজেল ও তরল গ্যাস — ইরান থেকে আমদানি করে, যা তাদের প্রধান স্থলসাশ্রয়ী সরবরাহকারী। দেশটিতে সমুদ্রবন্দর না থাকায় এবং বিকল্প কম থাকায়, পারস্য রুটে যেকোনো ব্যাঘাত দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে। ২০২৪ সালের শুরুতে ইরানি জ্বালানির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায়, কাবুলে পরিবহন ভাড়া ৩০% বৃদ্ধি পায় এবং গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এখন আবার নতুন করে সংঘাত শুরু হলে, দেশটির নাজুক জ্বালানি ব্যবস্থা আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।