সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ:
শুক্রবারে নির্ধারিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, প্রতিটি প্রতিবেদনই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জার্মানিতে IFO বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স প্রকাশিত হবে—যা দিনের সবচেয়ে স্বল্প গুরুত্বসম্পন্ন প্রতিবেদন। এর বিপরীতে, যুক্তরাজ্যে রিটেইল সেলস বা খুচরা বিক্রয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল ব্যবসায়িক কার্যকলাপ সূচকের দুর্বল ফলাফলের কারণে ব্রিটিশ পাউন্ডের আংশিকভাবে দরপতনের শিকার হয়েছিল; আজকেও একই রকম পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তি হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে—সেটি হচ্ছে ডিউরেবল গুডস বা টেকসই পণ্যের অর্ডার সংক্রান্ত প্রতিবেদন। এই ধরনের পণ্য সাধারণত উচ্চ মূল্যের হয়ে থাকে, তাই এটি ভোক্তাদের আস্থা ও মনোভাবের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের একটি নির্ভরযোগ্য সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়।
ফান্ডামেন্টাল ইভেন্টের বিশ্লেষণ:
শুক্রবারের ফান্ডামেন্টাল ইভেন্টগুলো বাস্তবিক অর্থে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে না। আগেও বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতির প্রাসঙ্গিকতা একদম কমে এসেছে—প্রথমত, একমাত্র মার্কিন ডলারই ধারাবাহিকভাবে দরপতনের শিকার হচ্ছে; দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থানের ব্যাপারে এখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুরোপুরি ধারণা রয়েছে। তাই, কোনো হঠাৎ অবস্থাকনের পরিবর্তন বা নীতিগত পালাবদলের সম্ভাবনা নেই, যার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বক্তব্য এখন আর বেশি আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারছে না।
এখনও বাণিজ্য যুদ্ধই বিনিয়োগকারীদের মূল উদ্বেগের কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, এবং এর সমাধানের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। এই বিষয়টি সম্ভবত দীর্ঘ সময় ধরে ডলারের মূল অনুঘটক হয়ে থাকবে। তাই প্রতিদিন একই কথার পুনরাবৃত্তি করা হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। পরিস্থিতি এখনও জটিল, কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প চার মাসের বেশি সময় ধরে আলোচনার পর মাত্র তিনটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে পেরেছেন—এর মধ্যে একটি চুক্তি নিয়ে আবার ব্যাপক অনিশ্চয়তা রয়েছে। সম্ভাব্য 75টি চুক্তির মধ্যে মাত্র তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আবারও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে অনিচ্ছুক দেশগুলোর ওপর শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পাশাপাশি তামা, ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টরের আমদানিতে নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন। তবে ট্রেডাররা এখনো এই নতুন সব শুল্ককে সম্পূর্ণরূপে মূল্যায়ন করেনি, কারণ সম্প্রতি টেকনিক্যাল কারেকশন হয়েছে।
উপসংহার:
সপ্তাহের শেষ দিনের ট্রেডিংয়ে, EUR/USD ও GBP/USD—উভয় পেয়ারের মূল্যের আবার ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট শুরু হতে পারে। টেকনিক্যাল কারেকশন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, তাই আমরা আশা করছি সামনের সপ্তাহ ও মাসগুলোতে উভয় পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।
EUR/USD পেয়ারের ক্ষেত্রে ট্রেডিং শুরুর জন্য 1.1740–1.1745 এরিয়া গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
GBP/USD পেয়ারের জন্য 1.3518–1.3532 জোনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রেডিং সিস্টেমের মূল নিয়মাবলী:
- সিগনালের শক্তি: যত দ্রুত একটি সিগন্যাল (রিবাউন্ড বা ব্রেকআউট) গঠিত হয়, সিগন্যালটিকে ততই শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- ভুল সিগন্যাল: যদি কোনো লেভেলের কাছে দুই বা ততোধিক ভুল ট্রেডিং সিগনাল গঠিত হয়, তাহলে ঐ লেভেল থেকে প্রাপ্ত পরবর্তী সিগন্যালগুলোকে উপেক্ষা করা উচিত।
- ফ্ল্যাট মার্কেট: যখন মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্ট দেখা যায়, তখন পেয়ারগুলোতে একাধিক ভুল সিগন্যাল গঠিত হতে পারে অথবা কোনো সিগন্যাল না-ও গঠিত হতে পারে। মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্টের ইঙ্গিত পাওয়ামাত্র ট্রেডিং বন্ধ করে দেওয়াই ভালো।
- ট্রেডিংয়ের সময়সূচী: ইউরোপীয় সেশন শুরু থেকে মার্কিন সেশনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ট্রেড ওপেন করুন এবং এরপর সকল ট্রেড ম্যানুয়ালি ক্লোজ করে ফেলুন।
- MACD সিগন্যাল: ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে কেবল সেই MACD সিগন্যালগুলোর ওপর ভিত্তি করে ট্রেড করুন, যেগুলো উচ্চ মাত্রার অস্থিরতা এবং ট্রেন্ডলাইন বা ট্রেন্ড চ্যানেলের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রবণতা হিসেবে বিবেচিত।
- নিকটতম লেভেল: যদি দুটি লেভেল খুব কাছাকাছি (৫–২০ পিপসের মধ্যে) অবস্থিত হয়, তাহলে সেগুলোকে সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স জোন হিসেবে বিবেচনা করুন।
- স্টপ লস: মূল্য কাঙ্ক্ষিত দিকের দিকে ১৫ পিপস মুভমেন্ট প্রদর্শন করলে, ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করুন। এতে করে ভুল সিগন্যালের কারণে লোকসানের ঝুঁকি কমে আসে।
চার্টে কী কী আছে:
সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল: এই লেভেলগুলো পজিশন ওপেন বা ক্লোজ করার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে কাজ করে এবং টেক প্রফিট সেট করার ক্ষেত্রেও উপযোগী।
লাল লাইনসমূহ: চ্যানেল বা ট্রেন্ডলাইন, যা বর্তমান প্রবণতা এবং ট্রেডের সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
MACD ইনডিকেটর (14,22,3): হিস্টোগ্রাম এবং সিগন্যাল লাইন বিশ্লেষণের জন্য একটি অতিরিক্ত ট্রেডিং সিগন্যালের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ও প্রতিবেদন: এই তথ্যগুলো অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে পাওয়া যায় এবং মূল্যের মুভমেন্টে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন বা মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসুন, যাতে হঠাৎ করে মূল্যের রিভার্সাল বা বিপরীতমুখী হওয়ার প্রবণতা এড়ানো যায়।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ে নতুন ট্রেডারদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি ট্রেড লাভজনক হবে না। দীর্ঘমেয়াদে ট্রেডিংয়ে সফলতা অর্জনের জন্য একটি সুস্পষ্ট কৌশল গ্রহণ এবং সঠিক মানি ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।