দুই দিনের মধ্যে USD/JPY পেয়ারের 200 পয়েন্টের দরপতন ঘটে এবং মঙ্গলবার প্রায় চার সপ্তাহের সর্বনিম্নে পৌঁছে 142.70 লেভেলের সাপোর্টে (D1 চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডস ইন্ডিকেটরের মিডিয়ান লাইন) টেস্ট করে। ইয়েনের দর শুধু ডলারের বিপরীতেই নয়, বরং অন্যান্য অনেক ক্রস-পেয়ারের বিপরীতেও বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে বুধবার USD/JPY-এর ক্রেতারা প্রায় সব হারানো মূল্য পুনরুদ্ধার করে এই পেয়ারের মূল্যকে আবার 144 রেঞ্জে ফিরিয়ে আনে। এর পেছনের কারণ হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি আবারও জাপানি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন। তাঁর বিবৃতির প্রভাবে মার্কেটে ইয়েন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং USD/JPY পেয়ারের মূল্য স্থানীয় সর্বনিম্ন লেভেল থেকে 150 পয়েন্ট পুনরুদ্ধার করে।
প্রথমেই বলা উচিত, ৯ জুলাই তথাকথিত "শুল্কছাড়" শেষ হচ্ছে—এই তিন মাসের সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র স্বতন্ত্র শুল্কের পরিবর্তে সার্বজনীন হারে 10% শুল্ক আরোপ করেছিল। ট্রাম্প আশা করেছিলেন এই তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্র "উচ্চ শুল্কের" আওতায় পড়া বহু দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন: এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাজ্য ও চীনের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরেছে।
এই পরিস্থিতি হোয়াইট হাউসকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না। সম্প্রতি ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তিনি "শুল্ক ছাড়ের সময়" আর বাড়াবেন না এবং বাণিজ্য অংশীদারদের সামনে দুটি পথ রাখবেন: হয় প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নিতে হবে, নয়তো উচ্চ হারে শুল্কের সম্মুখীন হতে হবে। তিনি উদাহরণ হিসেবে জাপানকে তুলে ধরেন, জানিয়ে দেন যে ৯ জুলাইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র জাপানি পণ্যের ওপর 30% বা 35% হারে শুল্ক আরোপ করতে পারে।
এমনও নয় যে এর আগে ট্রাম্প ওয়াশিংটন ও টোকিওর মধ্যে আলোচনার অগ্রগতির কথা বলেননি। মার্কিন গণমাধ্যম অনুযায়ী, জাপান সরকার চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য বড় ধরণের ছাড় দিতে রাজি ছিল। উদাহরণস্বরূপ, জাপান তাদের অটোমোটিভ খাতের কঠোর নিরাপত্তা মানদণ্ড শিথিল করতে প্রস্তুত ছিল বলে অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে, যা প্রায়ই বিদেশি কোম্পানির জন্য জাপানি বাজারে প্রবেশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
তবে এই গুজব বাস্তবে রূপ নেয়নি। আলোচনা স্থবির হয়ে গেছে এবং এক প্রকার অচলাবস্থায় পৌঁছেছে। ট্রাম্পের মতে, জাপানের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানো "খুব কঠিন" হবে এবং এমনকি তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে আদৌ কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে কিনা। এই প্রেক্ষাপটে, তিনি উল্লেখ করেন যে জাপান তাদের মধ্যে অন্যতম যারা বাড়তি শুল্ক আরোপের নোটিশ পেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে USD/JPY পেয়ারের দীর্ঘমেয়াদি লং পজিশন ওপেন করা কি নির্ভরযোগ্য? আমার মতে, না। প্রথমত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট শেষ মুহূর্তে "শুল্কছাড়ের সময়" বাড়িয়ে দিতে পারেন, অন্তত জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে। দ্বিতীয়ত, USD/JPY পেয়ারের মূল্যের স্থিতিশীল ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার জন্য ডলারের শক্তিশালী হওয়া দরকার, অথচ সামগ্রিক মৌলিক প্রেক্ষাপট ডলারের পক্ষে নেই।
উদাহরণস্বরূপ, জুন মাসের ISM ম্যানুফ্যাকচারিং ইনডেক্স বা উৎপাদন সূচক এখনও সংকোচন অঞ্চলে রয়ে গেছে (যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে সূচকটি 49-এ উন্নীত হয়েছে), এবং জুনের ADP প্রতিবেদনের ফলাফল প্রথমবারের মতো ডিসেম্বর 2020-এর পর নেতিবাচক অঞ্চলে পৌঁছেছে। বেসরকারি খাতের কর্মসংস্থান -33,000-এ পৌঁছেছে, যেখানে বেশিরভাগ বিশ্লেষক 99,000 বৃদ্ধি আশা করেছিলেন। আগের মাসের এই ফলাফল নিম্নমুখী হয়েছিল, 37,000 থেকে 29,000-এ নেমে এসেছিল। ADP-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, গত মাসে কর্মসংস্থান হ্রাসের কারণ ছিল "নতুন কর্মী নিয়োগে নিয়োগদাতাদের অনীহা এবং সামগ্রিকভাবে নিয়োগে দ্বিধা।" এটি জানা কথা যে ADP প্রতিবেদন সরকারিভাবে প্রকাশিত নন ফার্ম পেরোলের পূর্বাভাস হিসেবে কাজ করে। যদিও এই দুটি প্রতিবেদনের ফলাফল সবসময় একসঙ্গে যায় না, তবু বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদন প্রকাশের আগে এমন একটি সংকেত ডলারের জন্য শুভ নয়।
সুতরাং, আপাতত USD/JPY পেয়ারে বিনিয়োগের আগে অপেক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করাই যুক্তিযুক্ত। এই পেয়ার বিক্রি করা এখনই প্রাসঙ্গিক নয়, কারণ ট্রাম্পের 35% শুল্ক আরোপের হুমকির ফলে ইয়েন চাপের মধ্যে রয়েছে। USD/JPY পেয়ারের ট্রেডাররা এই মৌলিক কারণেই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, যার ফলে ক্রেতারা এই পেয়ারের মূল্যকে 150 পয়েন্টের বেশি উপরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তবে, এই পেয়ারটির লং পজিশন নেওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে, কারণ সামগ্রিকভাবে ডলার দরপতনের শিকার হচ্ছে। যদি বৃহস্পতিবার (3 জুলাই) প্রকাশিতব্য জুনের নন ফার্ম পেরোলের প্রতিবেদনের ফলাফল প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল আসে (অর্থাৎ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সংখ্যা 100K এর নিচে থাকে), তবে USD/JPY পেয়ারের বিক্রেতারা পুনরায় মার্কেটে নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে— যা ইয়েন শক্তিশালী হওয়ার কারণে নয়, বরং ডলারের দুর্বলতার কারণে হবে।
টেকনিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে, দৈনিক চার্টে এই পেয়ারের মূল্য এখনো বলিঙ্গার ব্যান্ডসের লোয়ার এবং মিডিয়ান লাইনের মধ্যে অবস্থান করছে এবং ইচিমোকু ইন্ডিকেটরের সব লাইনের (কুমো ক্লাউড সহ) নিচে রয়েছে। USD/JPY পেয়ারের ক্রেতারা ক্লাউডের নিম্ন সীমানার (144.20) টেস্ট করাতে চেয়েছিল, কিন্তু পরে সেখান থেকে মূল্য কমে যায় এবং এখন 143 এবং 144 লেভেলের মাঝখানে ওঠানামা করছে। অর্থাৎ, টেকনিক্যাল প্রেক্ষাপট এখনও এই পেয়ারের মূল্যের বিয়ারিশ প্রবণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে, কিন্তু নতুন করে নিম্নমুখী প্রবণতা শুরু হতে হলে বিক্রেতাদের একটি উপযুক্ত অনুঘটক প্রয়োজন— হয় নন ফার্ম পেরোলের দুর্বল ফলাফল, নয়তো "বাণিজ্য আলোচনায়" ইতিবাচক অগ্রগতি। তাই সামগ্রিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে আপাতত মার্কেটের বাইরে থাকা যুক্তিযুক্ত। ইয়েনের মূল্যের "ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা" থেমে গেছে ঠিকই, তবে জাপানি মুদ্রা থেকে এখনই বিনিয়োগ সরিয়ে নেয়ার সময় এখনও আসেনি।