মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবুও চীন ও ইউরোপের সঙ্গে আলোচনায় দ্বিমত এবং নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকির কারণে দৃশ্যমান অগ্রগতি থমকে রয়েছে—ফলে মার্কিন ডলার অন্যান্য অ্যাসেটের বিপরীতে তীব্রভাবে দুর্বল হতে শুরু করেছে।
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দুই বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে আলোচনায় কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। বরং সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার পথ আরও জটিল হয়ে উঠেছে, কারণ ট্রাম্প আবারও বাণিজ্য আলোচনায় নির্ধারিত সূক্ষ্ম সীমা এবং উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যের মাঝামাঝি অবস্থানে হাঁটছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই কৌশলগত অবস্থান এবার আরও কঠোর হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার অবস্থার প্রেক্ষাপটে। বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগের সঙ্গে তার প্রতিটি মন্তব্য পর্যবেক্ষণ করছেন, কারণ একটি অসতর্ক মন্তব্যই আবার নতুন করে শুল্কযুদ্ধ বাঁধাতে পারে এবং দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা দ্বিপাক্ষিক আস্থার জায়গা ধ্বংস করে দিতে পারে।
পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, কারণ সব পক্ষ এখন যেন একে অপরকে আক্রমণ করার জন্য অপেক্ষা করছে। অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে চীনের বড় ধরনের ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, আর মার্কিন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভাবনা পেছনে ফেলে নিজেদের অবস্থানকে ন্যায়সঙ্গত মনে করছে। ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষও একই কৌশল গ্রহণ করছে—যুক্তরাষ্ট্রের কাছে শুল্ক ছাড়ের আবেদন জানালেও বিনিময়ে কার্যত তারা কিছুই দিচ্ছে না। এই কঠোর অবস্থানই সব পক্ষের মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি করেছে, যার সহজ কোনো সমাধান নেই।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায় যখন গত সপ্তাহের শেষদিকে বেইজিং জানায় যে ওয়াশিংটন সাম্প্রতিক শুল্ক যুদ্ধবিরতিকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করেছে, পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণেরও ইঙ্গিত দিয়েছে। এর আগে, ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করে যে চীন বিরল খনিজ উপাদানের রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহারের চুক্তি বিলম্বিত করছে—যেটিকে যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করছে।
সোমবার হোয়াইট হাউস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একটি ফোনালাপ আয়োজনের চেষ্টা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, এই সপ্তাহেই দুই দেশের প্রেসিডেন্টের আলোচনা সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশিত হতে পারে। তবে শি'র প্রতিনিধিদের কেউই এখনো প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন করে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। ইউরোপীয় কমিশন, যা ইইউর বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনা করে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৫০% শুল্কের সমালোচনা করেছে এবং জানিয়েছে যে এই ধরনের পদক্ষেপ বাণিজ্য বিভ্রাট দূরীকরণে গৃহীত প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তারা সতর্ক করেছে যে যদি কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো না যায়, তবে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের আলোচনার কৌশল মূলত শুল্ককে একটি অর্থনৈতিক অস্ত্র হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আসে, যার মাধ্যমে তিনি বৈশ্বিক বাণিজ্য কাঠামোর পরিবর্তন করতে চান। এবং তার বিশ্বাস হলো—কেবল হুমকি-ধামকির মাধ্যমেই ২ এপ্রিল শুল্ক বৃদ্ধির পর শুরু হওয়া ৯০ দিনের সময়সীমার মধ্যে সর্বোচ্চ ফল আদায় করা যাবে।
এখন পর্যন্ত ট্রাম্প শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরেছেন। তবে অনেক বাজার বিশ্লেষকের মতে, এই চুক্তিটিও বেশ অস্পষ্ট এবং এটি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার মূল বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর খুবই সামান্য প্রভাব ফেলেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তার উপদেষ্টাদের প্রতিশ্রুত অন্যান্য চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন এখনো অনিশ্চিত।
উল্লেখযোগ্য যে, ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক এখন আইনি হুমকির মুখেও পড়েছে, কারণ গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত বেশিরভাগ শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করে এবং তা বন্ধের আদেশ দেয়। আপিল আদালত এই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার জন্য স্থগিত রেখেছে। যদি প্রাথমিক রায় বহাল থাকে, তবে এটি ট্রাম্পের অর্থনৈতিক এজেন্ডা এবং বৈদেশিক মূলধনের ওপর নির্ভরশীলতার সক্ষমতার ওপর বড় ধরনের আঘাত হানবে।
বর্তমানে, সবকিছুই মার্কিন ডলারের বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং ইউরো, পাউন্ড ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটের জন্য সহায়ক প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করছে।
EUR/USD পেয়ারের বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র
বর্তমানে ক্রেতাদের মূল্যকে 1.1420 লেভেলে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ উচিত। শুধুমাত্র এই লেভেল ব্রেক করা হলে 1.1460 লেভেল টেস্টের সম্ভাবনা তৈরি হবে। সেখান থেকে মূল্য 1.1490-এর দিকে যেতে পারলেও, এটি বড় ক্রেতাদের সহায়তা ছাড়া অর্জন করা কঠিন হবে। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.1520-এর সর্বোচ্চ লেভেল। তবে যদি এই পেয়ারের দরপতন হয়, তাহলে কেবলমাত্র মূল্য 1.1400 এরিয়ার কাছাকাছি থাকা অবস্থায় জোরালো ক্রয়ের প্রবণতার প্রত্যাশশা করা হচ্ছে। এই এরিয়ায় সাপোর্ট লেভেল না থাকলে, 1.1380 এর সর্বনিম্ন লেভেল রিটেস্টের জন্য অপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে বা 1.1347 থেকে লং পজিশন ওপেন করার সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।
GBP/USD পেয়ারের বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র
পাউন্ডের ক্রেতাদের প্রথম কাজ হলো মূল্যের 1.3555 এর রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক ঘটানো। মূল্য এই লেভেল অতিক্রম করলেই 1.3602-এর দিকে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে, যার ওপরে ব্রেকআউট অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.3640 এর এরিয়া। অন্যদিকে, যদি এই পেয়ারের দরপতন হয়, তাহলে বিক্রেতারা 1.3505-এর ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে। তারা সফল হলে এই রেঞ্জ ব্রেক করে GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3480-এর সর্বনিম্ন লেভেলের দিকে নেমে যেতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত 1.3450-এ পৌঁছানোর সম্ভাবনাও তৈরি হবে।