সোমবারের ট্রেডের বিশ্লেষণ
EUR/USD পেয়ারের 1H চার্ট

সোমবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সাথে EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের ট্রেড করা হয়েছে। আমরা পূর্বেই সতর্ক করেছিলাম যে ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ার পর আবারও ডলারের দরপতন শুরু হতে পারে। সেই অনুযায়ী, EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট শুরু হয়। সোমবার প্রায় সারাদিন এই পেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং রাত থেকেই এই মুভমেন্ট শুরু হয়। মূলত, শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণাটি বাণিজ্যযুদ্ধের আরেকটি নতুন ধাপের ইঙ্গিত দেয়। গত কয়েক মাস ধরেই মার্কিন ডলার এই কারণেই দরপতনের শিকার হচ্ছে, যখন ট্রেডাররা অন্যান্য প্রায় সব মৌলিক উপাদান উপেক্ষা করেছে—তাই সোমবার কী ভিন্ন কিছু প্রত্যাশিত ছিল? এছাড়াও, গতকাল জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন সংক্রান্ত PMI সূচক প্রকাশিত হয়েছে; তবে ট্রেডারদের সামগ্রিক মনোভাবের উপর এগুলোর কোনো প্রভাব পড়েনি। বর্তমানে ট্রেডারদের জন্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন তুলনামূলকভাবে গুরুত্বহীন। তা সত্ত্বেও, উল্লেখযোগ্য যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ISM সূচকটির ফলাফল প্রত্যাশার তুলনায় দুর্বল এসেছে, যা ডলারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে।
EUR/USD পেয়ারের 5M চার্ট
সোমবার ইউরোপীয় সেশনের শুরুতে ৫ মিনিটের টাইমফ্রেমে একটি নিখুঁত বাই সিগন্যাল গঠিত হয়। এই পেয়ারের মূল্য 1.1354–1.1363 এরিয়া থেকে রিবাউন্ড করে এবং 1.1413–1.1424 জোনের দিকে যায়। এরপর কিছুটা ফ্ল্যাট মুভমেন্ট দেখা গেলেও কার্যত কোনো ভুল সিগন্যাল তৈরি হয়নি। পরবর্তীতে, 1.1413–1.1424 এরিয়া থেকেই আবারো এই পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মোমেন্টাম শুরু হয়, যদিও এই মুভমেন্ট অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছিল।
মঙ্গলবারের ট্রেডিংয়ের কৌশল:
ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে EUR/USD পেয়ারের মূল্য অ্যাসেন্ডিং ট্রেন্ডলাইন ব্রেক করেছে; তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বায়িত্ব নেয়ার সময় শুরু হওয়া ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ট্রাম্প এখনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট শুধুমাত্র এই বিষয়টিই ডলারের দরপতনের জন্য যথেষ্ট। ট্রেডারদের জন্য এটি একটি শক্তিশালী সংকেত যে ডলার থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। যদি ট্রাম্প হুমকি-ধামকি প্রদান, আল্টিমেটাম ও নতুন করে শুল্ক আরোপ/বৃদ্ধি অব্যাহত রাখেন, তাহলে ডলার বিক্রি করা ছাড়া ট্রেডারদের কাছে খুবই সীমিত বিকল্প থাকবে। ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক এখনো বাতিল হয়নি, তাই বাণিজ্যযুদ্ধ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।
মঙ্গলবার যেকোনো দিকেই EUR/USD পেয়ারের মূল্যের মুভমেন্ট দেখা যেতে পারে, কারণ ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব ইতোমধ্যেই মার্কেটে মূল্যায়িত হয়েছে। সুতরাং, আজ মূলত টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে ট্রেডিং করা উচিত—অন্তত যতক্ষণ না ট্রাম্প নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেন।
৫ মিনিটের টাইমফ্রেমে ট্রেডিংয়ের জন্য বিবেচ্য লেভেলগুলো হলো: 1.0940–1.0952, 1.1011, 1.1088, 1.1132–1.1140, 1.1198–1.1218, 1.1267–1.1292, 1.1354–1.1363, 1.1413–1.1424, 1.1474–1.1481, 1.1513, 1.1548, 1.1571, 1.1607–1.1622।
মঙ্গলবার ইউরোজোনে মে মাসের মুদ্রাস্ফীতির প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে; তবে এই প্রতিবেদনটির ফলাফল মার্কেটে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে না। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় নিশ্চিতভাবেই বৃহস্পতিবার সুদের হার কমাতে যাচ্ছে, এবং তা ইউরোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে অনুমান করা হচ্ছে। সেইসাথে আজ যুক্তরাষ্ট্রে JOLTs থেকে চাকরির শূন্যপদ সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে; তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রতিবেদনের প্রভাবও অত্যন্ত সীমিত হতে পারে।
ট্রেডিং সিস্টেমের মূল নিয়মাবলী:
- সিগনালের শক্তি: যত দ্রুত একটি সিগন্যাল (রিবাউন্ড বা ব্রেকআউট) গঠিত হয়, সিগন্যালটিকে ততই শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- ভুল সিগন্যাল: যদি কোনো লেভেলের কাছে দুই বা ততোধিক ভুল ট্রেডিং সিগনাল গঠিত হয়, তাহলে ঐ লেভেল থেকে প্রাপ্ত পরবর্তী সিগন্যালগুলোকে উপেক্ষা করা উচিত।
- ফ্ল্যাট মার্কেট: যখন মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্ট দেখা যায়, তখন পেয়ারগুলোতে একাধিক ভুল সিগন্যাল গঠিত হতে পারে অথবা কোনো সিগন্যাল না-ও গঠিত হতে পারে। মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্টের ইঙ্গিত পাওয়ামাত্র ট্রেডিং বন্ধ করে দেওয়াই ভালো।
- ট্রেডিংয়ের সময়সূচী: ইউরোপীয় সেশন শুরু থেকে মার্কিন সেশনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ট্রেড ওপেন করুন এবং এরপর সকল ট্রেড ম্যানুয়ালি ক্লোজ করে ফেলুন।
- MACD সিগন্যাল: ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে কেবল সেই MACD সিগন্যালগুলোর ওপর ভিত্তি করে ট্রেড করুন, যেগুলো উচ্চ মাত্রার অস্থিরতা এবং ট্রেন্ডলাইন বা ট্রেন্ড চ্যানেলের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রবণতা হিসেবে বিবেচিত।
- নিকটতম লেভেল: যদি দুটি লেভেল খুব কাছাকাছি (৫–২০ পিপসের মধ্যে) অবস্থিত হয়, তাহলে সেগুলোকে সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স জোন হিসেবে বিবেচনা করুন।
- স্টপ লস: মূল্য কাঙ্ক্ষিত দিকের দিকে ১৫ পিপস মুভমেন্ট প্রদর্শন করলে, ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করুন। এতে করে ভুল সিগন্যালের কারণে লোকসানের ঝুঁকি কমে আসে।
চার্টের মূল উপাদান:
সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল: এই লেভেলগুলো পজিশন ওপেন বা ক্লোজ করার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং টেক প্রফিট সেট করার ক্ষেত্রেও উপযোগী।
লাল লাইনসমূহ: চ্যানেল বা ট্রেন্ডলাইন, যা বর্তমান প্রবণতা এবং ট্রেডের সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
MACD ইনডিকেটর (14,22,3): হিস্টোগ্রাম এবং সিগন্যাল লাইন বিশ্লেষণের জন্য একটি অতিরিক্ত ট্রেডিং সিগন্যালের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ও প্রতিবেদন: এই তথ্যগুলো অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে পাওয়া যায় এবং মূল্যের মুভমেন্টে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন বা মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসুন, যাতে হঠাৎ করে মূল্যের রিভার্সাল বা বিপরীতমুখী হওয়ার প্রবণতা এড়ানো যায়।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ে নতুন ট্রেডারদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি ট্রেড লাভজনক হবে না। দীর্ঘমেয়াদে ট্রেডিংয়ে সফলতা অর্জনের জন্য একটি সুস্পষ্ট কৌশল গ্রহণ এবং সঠিক মানি ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।