ফেডারেল রিজার্ভের সর্বশেষ আর্থিক নীতিমালা সংক্রান্ত বৈঠকের ফলাফল আমরা বুধবার জানতে পারব । একদিকে এটি একটি নিয়মিত বৈঠক যার ফলাফল আগে থেকেই অনেকটাই নির্ধারিত। অন্যদিকে, কারেন্সি মার্কেট এমনভাবে থেমে গেছে যেন এটি বহু প্রতীক্ষিত কোনো সিনেমার অপেক্ষায় রয়েছে—যার গল্প জটিল, কিন্তু শেষটা জানা।
প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ফেড বর্তমান সকল আর্থিক নীতিমালা অপরিবর্তিত রাখবে এবং সুদের হার 4.5% এ ধরে রাখবে। CME FedWatch টুল অনুসারে, এই দৃশ্যপটের সম্ভাবনা 96%। এদিকে, মার্কেটের ট্রেডাররা জুন মাসের বৈঠকে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা মাত্র 31% বলে বিবেচনা করছে।
অর্থাৎ, মার্কেটের ট্রেডাররা ধারণা করছে মে মাসে ফেড সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে এবং জুন মাসেও খুব বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। তাহলে কৌতূহলের জায়গাটা কোথায়?
এই উত্তর ফেডের কর্মকর্তাদের বক্তব্য থেকে প্রাপ্ত বার্তায় পাওয়া যাবে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন, যিনি তাকে প্রকাশ্যেই "Mr. Too Late" বলে অভিহিত করেছেন। মাত্র দুই দিন আগেই ট্রাম্প আবারো ফেডকে দ্রুত সুদের হার কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন, যুক্তি দিয়েছেন যে ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক বর্তমানে 175 বেসিস পয়েন্ট হার কমিয়েছে।
পাওয়েল যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চাপে নতি স্বীকার করবেন না, তা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই—তিনি প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের চাপ সামলেছেন। তবে, FOMC বিবৃতি এবং পাওয়েলের প্রেস ব্রিফিংয়ে সজাগ দৃষ্টি দেয়া উচিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপ ছাড়াও, ফেড এখন একটি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে—একদিকে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির প্রত্যাশা, অন্যদিকে অর্থনৈতিক সূচকের মিশ্র ফলাফল। এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলোই ভবিষ্যতের আর্থিক নীতিমালার প্রত্যাশা গড়তে সহায়তা করবে।
ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের তথ্য অনুসারে, এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এক বছরের মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা বেড়ে দাঁড়িয়েছে 6.5%—যা মার্চে ছিল 5.0% এবং এটি ১৯৮১ সালের নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ। তবে, এপ্রিলের CPI এবং PPI প্রতিবেদন ফেডের বৈঠকের পরে প্রকাশিত হবে, তাই FOMC-কে মার্চের পুরনো প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাপ্ত প্রতিবেদন কিন্তু আরও নেতিবাচক পরিস্থিতি নির্দেশ করছে এবং ভবিষ্যতে মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। নতুন শুল্কের কারণে শুধু আমদানিকৃত পণ্য নয়, বরং আমদানিকৃত উপাদানে তৈরি মার্কিন পণ্যের দামও বেড়েছে। তাই মুদ্রাস্ফীতি এখন ফেডের জন্য প্রধান সমস্যা।
অন্যদিকে, যে সব সামষ্টিক প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দুর্বলতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোকে ফেড হয়তো খুব একটা গুরুত্ব দেবে না। এক কথায় বলা যায়: "পরিস্থিতি এখনো খুব খারাপ হয়নি"।
হ্যাঁ, এপ্রিল মাসে কনজিউমার কনফিডেন্স ইনডেক্স বা ভোক্তা আস্থা সূচক নেমে এসেছে 86-এ, এবং ISM ম্যানুফ্যাকচারিং ইনডেক্স নেমেছে 48.7-এ—দুটি সূচকের ফলাফলই বহু মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তর। তবে ISM সার্ভিসেস ইনডেক্স এখনো 51.6-এ রয়েছে, অর্থাৎ সম্প্রসারণ অঞ্চলে রয়েছে। এপ্রিলের ননফার্ম পেরোলস প্রতিবেদনেও স্থিতিশীলতা দেখা গিয়েছে: কর্মসংস্থান বেড়ে 177,000 হয়েছে, গড় আয় 3.8% এ স্থির রয়েছে, এবং বেকারত্বের হার 4.2%-এ অপরিবর্তিত রয়েছে।
এমনকি প্রথম প্রান্তিকের জিডিপি প্রতিবেদনের হতাশাজনক ফলাফলও প্রশ্ন তুলেছে: পূর্বাভাসে যেখানে জিডিপির +0.4% প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেখানে বাস্তবে -0.3% সংকোচন দেখা গেছে। এর বড় কারণ ছিল হঠাৎ করে 41% আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি—যা ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির আগেই মার্কিন কোম্পানিগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
এখন স্ট্যাগফ্লেশনের ঝুঁকি বাড়ছে: শুল্ক পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, আবার পুরো অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি করছে। তবুও, সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ফেডের হাতে এখনো সময় রয়েছে। অর্থনীতি এখনো তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে, যদিও মন্থর হয়ে পড়ছে।
সব মিলিয়ে কী বোঝা যাচ্ছে?
প্রথমত, মে মাসের বৈঠকে ফেড আর্থিক নীতিমালার সব উপাদান অপরিবর্তিত রাখবে। দ্বিতীয়ত, তারা হয়তো মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করবে, তবে বলবে যে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত প্রতিবেদন নেই। পাওয়েল এপ্রিল মাসে যেমন বলেছিলেন, "ফেডকে পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে"—সেই বার্তাই পুনরায় দিতে পারেন। FOMC-এর সদস্যরা সম্ভবত গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালারের মতো নমনীয় নীতিমালার পক্ষে যাবেন না—যিনি সম্প্রতি বলেছেন, যদি শুল্ক বৃদ্ধিতে মন্দার ঝুঁকি বাড়ে, তাহলে তিনি দ্রুত সুদের হার কমানোর পক্ষে আছেন, এমনকি মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেলেও। বরং, মে মাসের বৈঠকে স্পষ্ট হবে যে ফেড এখনো মন্দার চেয়ে মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশি মনোযোগী কিনা।
সারাংশ: ফেড এখনো "অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ" কৌশল অনুসরণ করবে এবং জুন মাস পর্যন্ত সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার ইঙ্গিত দেবে।
এই ফলাফল ইতোমধ্যে মার্কেটে মূল্যায়িত হয়েছে (CME FedWatch এর মাধ্যমে প্রতিফলিত), তাই মার্কিন ডলারের কোনো বড় মুভমেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। EUR/USD পেয়ারের মূল্য সম্ভবত 1.13 রেঞ্জেই থাকবে, যদিও সাময়িকভাবে ভোলাটিলিটি বা অস্থিরতা দেখা যেতে পারে। ট্রেডাররা এবং ফেড এখন অপেক্ষা করবে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আলোচনার পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য—যার বাস্তবিক অর্থে এখনো শুরুই হয়নি।